পার্বত্যাঞ্চলে এ বছর জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলনে জুমিয়া নারী-পুরুষের চোখে মুখে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। তবে সেই উচ্ছ্বাস মুহূর্তে ফিকে হচ্ছে ইঁদুরের উপদ্রবে। কষ্টের জুম ঘরে তোলার আগেই নষ্ট করে দিচ্ছে ইঁদুর।তাই বাম্পার ফলনেও ক্ষতির মুখে পড়া শঙ্কা জাগছে জুম চাষিদের মনে।
জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সবে শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। কিন্তু ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে তা খেয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে ইঁদুর। তাই গত বছরের তুলনায় এবার ৭৫ শতাংশ জুমের ধান নষ্ট হতে পারে বলে দাবি জুম চাষিদের।
রাঙামাটি কৃষি বিভাগ বলছে, পার্বত্যাঞ্চলে এ বছরও জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন চাষিরা। তবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চাষাবাদও কিছুটা কম হয়েছে। তবে রাঙামাটির ১০টি উপজেলার মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এবার ইদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন চাষিরা।
সাজেকের স্থানীয় জুম চাষি রেনুবালা চাকমা জানান, সারা বছর কষ্ট করে জুম চাষ করেও কোন লাভ হল না। ঘরে তোলার আগেই ইঁদুরে ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। তাই এ বছর পর্যাপ্ত ধান মজুদ করতে না পারলে খাদ্যসংকটে পড়তে হবে চাষিদের।
একই কথা জানিয়েছেন আরেক চাষি সমেরেশ চাকমা। তিনি বলেন, দুই একর জমিতে জুম চাষ করে ধান পেয়েছি মাত্র দুই বস্তা। বাকি ধান ইঁদুর নষ্ট করে ফেলেছে।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানান, সাজেকে প্রতিবছর একটা সময় জুম চাষিরা খাদ্যসংকটে পড়ে। কিন্তু এবার ইঁদুর ঘরে তোলার আগেই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে ফেলেছে। এর প্রভাব পড়বে চলতি বছর। পাহাড়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তপন কুমার পাল জানান, জুমে শুধুমাত্র ধান নয়, পাশাপাশি তোলা হয় নানাজাতের সবজি, হলুদ, মরিচ, তুলা, তিল ও ভুট্টা। তবে কম বৃষ্টিপাত আর ইদুরের উপদ্রবে চাষিরা কিছুটা সমস্যা পড়েছে। তবে যথাসময়ে জুম ঘরে তোলা গেলে খাদ্যসংকট দূর করা সম্ভব হবে। রাঙামাটিতে এ বছর জুম আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০হেক্টর। হেক্টরপ্রতি ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন।